বার্তা পরিবেশক:
কক্সবাজার সদরের ভারুয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদে ‘প্যানেল চেয়ারম্যান’ পদকে কেন্দ্র করে নথি জালিয়াতির ঘটনায় সৃষ্টি হয়েছে চাঞ্চল্য।

গুরুত্বপূর্ণ এই ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান হতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগ নেতা শাহাবুদ্দিন। যিনি বহিষ্কৃত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিনের চাচাতো ভাই।

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হতে বিভিন্ন দপ্তরে দফায় দফায় আবেদনও করেন শাহাবুদ্দিন।

এরই ধারাবাহিকতায় শাহাবুদ্দিন ১৫ এপ্রিল ২০২৫ ইং তারিখে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর আবেদন করেন সেখানে উল্লেখ করেন চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন নির্বাচিত হওয়ার প্রথম সভায় প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করেন।

এছাড়া ২৪ আগস্ট ২০২৫ইং তারিখে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদনে উল্লেখ করেন একইভাবে চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন নির্বাচিত হওয়ার প্রথম সভায় প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করেন। এবং ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ইং তারিখে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদনে একইভাবে উল্লেখ করেন। তবে দুইদিন পর ২৩ সেপ্টেম্বর আবারও ডিসি বরাবর আবেদনে লিখেন তাকে ২৩ অক্টোবর ২০২২ইং তাকে প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়। কিন্তু ভারুয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনের পর শপথ গ্রহণ পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হয় ফেব্রুয়ারী মাসে। আগের তিন আবেদনে প্রথম সভায় প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করার দাবি করলেও মূলত তার আবেদনে উল্লেখিত তারিখ প্রায় ৯ মাস পর।

এদিকে সর্বশেষ আবেদন অনুযায়ী রীট করেন হাইকোর্টে। যেখানে ডিসি ও ইউএনও বরাবর আবেদন করা সব আবেদন পত্র যুক্ত করে দেন। হাইকোর্টে রীট করেছে। রীট পিটিশন নম্বর ১৬১৮৪/২০২৫। চলতি বছরের ২৮ অক্টোবরের রীটের শুনানীতে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও মোঃ আশিফ হাসানের আদালত রায় দেন যে, ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারুয়াখালীর ইউনিয়ন পরিষদের বহিষ্কৃত ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা কামাল উদ্দিনের চাচাতো ভাই হওয়ায় ক্ষমতা হারানোর পরও সাহাব উদ্দিনকে চেয়ারে বসাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। যার ফলে ইউনিয়ন পরিষদের সভার বহিতে খালা রাখা পৃষ্ঠায় মেম্বারদের স্বাক্ষর নিয়ে তাকে প্যানেল চেয়ারম্যান বানিয়েছেন বলে দাবি করেন।

কিন্তু আমাদের হাতে আসা কয়েকটি নথি পর্যবেক্ষন করে দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদের অধকাংশ মেম্বারগণ ২০২২ সালের ৮ মে ইউনিয়ন পরিষদে প্যানেল চেয়ারম্যান না থাকায় তৎকালীন ডিসি বরাবর প্যানেল চেয়ারম্যান দিতে আবেদন করেন। সেখানে তারা উল্লেখ করেন, প্রথম সভা হয় ৭ই ফেব্রুয়ারী ২০২২ইং তারিখে। সরকারি বিধি অনুযায়ী প্রথম সভার পর ৩০ কার্য দিবসের মধ্যে প্যানেল চেয়ারম্যান করার নিয়ম থাকলেও তিনি করেন নি এবং তারা আরো উল্লেখ করেন চেয়রাম্যান কামাল সবার অগোচরে পছন্দের ব্যক্তিকে প্যানেল বানাতে চেষ্টা করছে। এদিকে চেয়ারম্যান পদে বসতে মরিয়া সাহাব উদ্দিন হাইকোর্টে করা রীট আবেদনে ২৩ অক্টোবর প্রথম সভায় প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত করার দাবি করলেও মেম্বারদের আবেদন অনুযায়ী জানা যায় প্রথম সভা হয়েছে মূলত ৭ই ফেব্রুয়ারী।

এদিকে কক্সবাজার সদর উপজেলার তৎকালীন ইউএনও মোহাম্মদ জাকারিয়া নানা অনিয়মের অভিযোগে ২০২২সালের ১২ ডিসেম্বর ভারুয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি মেম্বারদের স্বাক্ষরযুক্ত কিন্তু বর্ননা ও তারিখবিহীন বেশ কিছু সভার কার্যবিবরণী খাতা জব্দ করেন। যা তিনি স্মারক ১১১০/২০২২ মূলে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউপি মেম্বার বলেন, সাহাব উদ্দিনকে চেয়ারম্যান বানানোর মিশন মূলত আওয়ামী লীগের। কারণ আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি কমল ইতিমধ্যে মেম্বারদের ফোনে অনুরোধ করেছেন সাহাব উদ্দিনকে প্যানেল বানাতে।

এদিকে, ইউনিয়ন পরিষদ আইনের ৩৩ ধারার ৫ উপধারা অনুযায়ী সদস্যদের মধ্য থেকে চেয়ারম্যানের প্যানেল গঠন করা সম্ভব না হয়, তাহলে সরকার প্রয়োজনে সদস্যদের মধ্য থেকে চেয়ারম্যানের প্যানেল তৈরি করতে পারবে। এবং এই ধারা অনুযায়ী বর্তমান এমইউপি মোঃ ফজলুল হককে প্যানেল চেয়ারম্যান বানাতে চলতি বছরের ১০ আগস্ট ১০ জন মেম্বারের স্বাক্ষর দিয়ে ডিসি বরাবর আবেদন করেন। সেই ১০ মেম্বারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ফজলুল হক মেম্বারকে আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রদানের নিমিত্তে ইউনিওকে সুস্পষ্ট মতামতসহ প্রতিবেদন দিতে অনুরোধ করেন জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের সহকারি কমিশনার ইরফান উল হাসান একটি চিঠি দেন। এবং চিঠির প্রেক্ষিতে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ইং তারিখে ডিসি বরাবর একটি মতামতসহ প্রতিবেদন দেন। যেখানে তিনি উল্লখে করেন ভারুয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক ও দৈনন্দিন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য এমইউপি ফজলুল হককে প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে দেওয়া যেতে পারে মর্মে মতামত দেন। এরপর থেকেই দৌড়ঝাপ শুরু করেন শাহাবউদ্দিন।